![](https://rrrbangladesh.com/wp-content/uploads/2023/06/dp-tyre-retrding-01-20230509175820-1200x580.jpg)
‘রিট্রেডেড’ টায়ারে আগ্রহ মালিকদের, মারাত্মক ঝুঁকিতে যাত্রী-পণ্য’
সড়কে বাস-ট্রাক দুর্ঘটনার আড়ালে
‘রিট্রেডেড’ টায়ারে আগ্রহ মালিকদের, মারাত্মক ঝুঁকিতে যাত্রী-পণ্য
![‘রিট্রেডেড’ টায়ারে আগ্রহ মালিকদের, মারাত্মক ঝুঁকিতে যাত্রী-পণ্য](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023May/dp-tyre-retrding-01-20230509175820.jpg)
- একটি নতুন টায়ারের দামে মেলে চারটি রিট্রেডেড টায়ার
- দাম কম হওয়ায় রিট্রেডেড টায়ারে আগ্রহ মালিকদের
- টায়ারের গুণগত মান যাচাইয়ে নেই কোনো প্রতিষ্ঠান
- মরলে মরবে চালক-যাত্রী, এমন পারসেপশন বাসমালিকদের
- ইমাদ পরিবহনের ফাটা টায়ারের মান ভালো ছিল না
- ঝুঁকি এড়াতে বিএসটিআই-এর সক্ষমতা বাড়াতে হবে
গাড়ির অন্যান্য যন্ত্রাংশের মতো চাকার টায়ারও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, চলন্ত গাড়ির চাকার টায়ার ফেটে গেলে (বিশেষ করে সামনের চাকা) ওই গাড়ি আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এতে গাড়িতে থাকা চালক-যাত্রীসহ সবাই মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
টায়ার ফেটে গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার খবর আমরা প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে পাই। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতও হয় অনেক। গাড়ির টায়ার ফেটে যাওয়ার নানা কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো অননুমোদিত ‘রিট্রেডেড টায়ার’ ব্যবহার।
ADVERTISEMENT
নতুন টায়ার ব্যবহারের পর বিটগুলো (ট্রেড) যখন ক্ষয় হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়, তখন সেই টায়ার বাদ দিয়ে নতুন টায়ার ব্যবহার করাই নিয়ম। কিন্তু সেটি না করে গাড়ির মালিকরা খরচ কমাতে ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে (মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার) নতুন করে বিট বা ট্রেড লাগান এবং বড় গাড়ির ক্ষেত্রে (বাস, ট্রাক ও লরি) টায়ার রিট্রেড করান। এতে গাড়ির চালক ও যাত্রীরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন
গত ১৯ মার্চ সকালে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সামনের চাকার টায়ার ফেটে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস দুর্ঘটনায় পতিত হয়। মারা যান চালকসহ ১৯ যাত্রী, আহত হন ২৬ জন। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) নয়টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘আমদানি করা টায়ার ও টায়ার-সম্পর্কিত উপাদানগুলোর গুণগতমান পরীক্ষা করার জন্য বিএসটিআইকে ধ্বংসাত্মক ও অধ্বংসাত্মক— উভয় ধরনের পরীক্ষা করার সুবিধা দেওয়া।’
আরও পড়ুন >> মানুষ মরছে, দায় নিচ্ছে না কেউ
নতুন টায়ার ব্যবহারের পর বিটগুলো যখন ক্ষয় হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়, তখন সেই টায়ার বাদ দিয়ে নতুন টায়ার ব্যবহার করাই নিয়ম। কিন্তু সেটি না করে গাড়ির মালিকরা খরচ কমাতে টায়ার রিট্রেড করান। এতে গাড়ির চালক ও যাত্রীরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন বলে মনে করেন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।
ADVERTISEMENT
যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো মনে করে, বাংলাদেশের বাজারে রিট্রেডেড টায়ার বিক্রি করার মানে হলো ফেরি করে দুর্ঘটনা বিক্রি করা!
রিট্রেডেড টায়ার কী
নতুন টায়ার ব্যবহার করতে করতে বিট বা ট্রেড যখন ক্ষয় হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয় তখন সেই টায়ারের ওপর নতুন করে রাবারের ট্রেড বসিয়ে টায়ার প্রস্তুত করা হয়। এটিকে রিট্রেডেড টায়ার বলে।
বাস-ট্রাকের সাইজ ভেদে একটি টায়ারের দাম পড়ে ৩৫ থেকে ৩৯ হাজার টাকা। ওই প্রতিষ্ঠানের বাস-ট্রাকের 10.00R 20 সাইজের সবচেয়ে ভালো মানের একটি টায়ারের দাম পড়ে ৩৯ হাজার ৫৩০ টাকা। অর্থাৎ এ মানের এক জোড়া টায়ারের দাম পড়ে ৭৯ হাজার ৬০ টাকা। অথচ ওই সাইজের এক জোড়া রিট্রেডেড টায়ারের দাম পড়ে মাত্র ১৪ থেকে ১৮ হাজার টাকা। খুব ভালো মানের হলে ২০ হাজার টাকা জোড়া পড়ে। অর্থাৎ এক জোড়া নতুন টায়ারের দামে পাওয়া যাবে চার জোড়া রিট্রেডেড টায়ার
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়াররা মনে করেন, এমন টায়ার ব্যবহার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যাত্রীবাহী বাসসহ কোনো গাড়ির অন্তত সামনের চাকায় কখনোই রিট্রেডেড টায়ার ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, সামনের চাকা ডানে-বাঁয়ে মুভ করে। চলন্ত অবস্থায় ব্রেক কষে যদি চাকা ডানে-বাঁয়ে মুভ করে এবং সেসময় যদি ট্রেড উঠে যায়, তখন মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন >> কালশী ফ্লাইওভারে মরণ ফাঁদ
যারা টায়ার রিট্রেড করার কাজে জড়িত তারা মনে করেন, এ টায়ার তিন থেকে ছয় মাস বা তার বেশি সময় ব্যবহার করা যায়। টায়ার রিট্রেড করলে সেটি মূল টায়ারের মতো না হলেও তেমন অসুবিধা হয় না। মূল টায়ার থেকে রিট্রেড করা এক জোড়া টায়ারের দাম অন্তত চারগুণ কম। ফলে নতুন টায়ারের পাশাপাশি গাড়ির মালিকরা এ টায়ার ব্যবহারে আগ্রহী হন।
ভারতীয় বহুজাতিক টায়ার উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের এপ্রিল মাসের মূল্য তালিকা থেকে জানা যায়, বাস-ট্রাকের সাইজ ভেদে একটি টায়ারের দাম পড়ে ৩৫ থেকে ৩৯ হাজার টাকা। ওই প্রতিষ্ঠানের বাস-ট্রাকের 10.00R 20 সাইজের সবচেয়ে ভালো মানের একটি টায়ারের দাম পড়ে ৩৯ হাজার ৫৩০ টাকা। অর্থাৎ এ মানের এক জোড়া টায়ারের দাম পড়ে ৭৯ হাজার ৬০ টাকা। অথচ ওই সাইজের এক জোড়া রিট্রেডেড টায়ারের দাম পড়ে মাত্র ১৪ থেকে ১৮ হাজার টাকা। খুব ভালো মানের হলে ২০ হাজার টাকা জোড়া পড়ে। অর্থাৎ এক জোড়া নতুন টায়ারের দামে পাওয়া যাবে চার জোড়া রিট্রেডেড টায়ার।
![dhakapost](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023May/dp-tyre-retrding-03-20230509181332.jpg)
ট্রাকের ক্ষেত্রে রিট্রেডেড টায়ার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বাসের পেছনের চার চাকার টায়ার রিট্রেড করা যায়। তবে, এটি ভালো জায়গা (ব্র্যান্ড) থেকে করতে হবে। বাসসহ কোনো গাড়ির সামনের চাকায় কখনও রিট্রেডেড টায়ার ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, সামনের চাকা ডানে-বাঁয়ে মুভ করে। চলন্ত অবস্থায় ব্রেক কষে যদি চাকা ডানে-বাঁয়ে মুভ করে এবং সেসময় যদি ট্রেড উঠে যায়, মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারেঅটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
রিট্রেডেড টায়ার সম্পর্কে যা বলছেন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়াররা
রিট্রেডেড টায়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে ওই ভারতীয় বহুজাতিক টায়ার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের এক অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, উৎপাদনের তারিখ থেকে হিট (ব্যবহার) হওয়ার আগ পর্যন্ত টায়ার কার্যক্ষমতা হারায় না। টায়ারের রাবার যখন থেকে গরম হবে, তখন থেকে ড্যামেজ হওয়া শুরু করবে। যথাযথ সংরক্ষণ করে ব্যবহারের দিন থেকে মোটরযানের টায়ার তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
ব্যবহারের দিন থেকে বড় টায়ারের (বাস-ট্রাক) ক্ষেত্রে তিন বছর, মোটরসাইকেলের টায়ার চার বছর এবং প্রাইভেটকারের টায়ার পাঁচ বছর পর্যন্ত লাইফটাইম (স্থায়িত্বকাল) থাকে। এছাড়া লোডের (ব্যবহার) ওপর ভিত্তি করেও টায়ারের লাইফটাইম কমতে পারে।
টায়ারের লাইফটাইম শেষ হওয়ার পর সেটির বিট কেটে রিট্রেড করে ব্যবহার কতটা বিপজ্জনক— জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটরসাইকেলের টায়ারে রাবার থাকে কম। টায়ারের ভেতর সুতা ও তার থাকে। এক্ষেত্রে রাবার গুরুত্বপূর্ণ নয়; যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সুতা ও তার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সাধারণত মোটরসাইকেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিট কেটে ব্যবহার করা যায়।
![dhakapost](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023May/dp-tyre-retrding-08-20230509181436.jpg)
‘বাস বা ট্রাকের ক্ষেত্রে বিট কাটা হয় না। এখানে টায়ারের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুরোটা ফেলে দিয়ে রিট্রেড করা হয়। এটি টেকনোলজিক্যালি করা হয়, যদি ক্যাচিংটা ভালো থাকে। এটি বাসের ক্ষেত্রে খুব বেশি ব্যবহৃত হয়।’রিট্রেডেড টায়ার শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ। গাড়ির লোড ক্যাপাসিটির (ধারণ ক্ষমতা) ওপর নির্ভর করে টায়ারের স্থায়িত্ব। ধরেন, পা যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে কি আপনি দৌড়াতে পারবেন? গাড়ির ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম। রিট্রেড করে টায়ার ব্যবহারের অনুমোদন পৃথিবীর কোনো দেশে নেইইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম
‘ট্রাকের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বাসের পেছনের চার চাকার টায়ার রিট্রেড করা যায়। তবে, এটি ভালো জায়গা (ব্র্যান্ড) থেকে করতে হবে। বাসসহ কোনো গাড়ির সামনের চাকায় কখনও রিট্রেডেড টায়ার ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, সামনের চাকা ডানে-বাঁয়ে মুভ করে। চলন্ত অবস্থায় ব্রেক কষে যদি চাকা ডানে-বাঁয়ে মুভ করে এবং সেসময় যদি ট্রেড উঠে যায়, তখন মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
বাংলাদেশ অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রিট্রেডেড টায়ার শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ। গাড়ির লোড ক্যাপাসিটির (ধারণ ক্ষমতা) ওপর নির্ভর করে টায়ারের স্থায়িত্ব। ধরেন, আপনার পা যদি ভেঙ্গে যায়, তাহলে কি আপনি দৌড়াতে পারবেন? গাড়ির ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম। রিট্রেড করে টায়ার ব্যবহারের অনুমোদন পৃথিবীর কোনো দেশে নেই।
আরও পড়ুন >> সেতু ভেঙে নদীতে লরি, সব দায় চালকের কাঁধে
‘দুবাইতে যদি আজ (২০২৩ সাল) গাড়িতে টায়ার লাগাতে চান, অবশ্যই ২০২২ সালে উৎপাদিত টায়ার লাগাতে হবে। ২০২১ সালের টায়ার হলে সেটি বাতিল করে দেওয়া হবে। কারণ, উৎপাদনের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে টায়ার গাড়িতে স্থাপন করার নিয়ম তাদের।’
‘আমাদের দেশের মালিকরা গাড়ির পেছনে টাকা খরচ করতে চান না। ফলে তারা রিট্রেডেড টায়ার ব্যবহার করে গাড়ি রাস্তায় নামান। একজন চালক সব নিয়ম মেনে রাস্তায় চলাচল করলেও আমি কিংবা আপনি কেউ ঝুঁকিমুক্ত নন। কারণ, আপনার গাড়ির চাকা ঠিক নেই; গাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ।’- বলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম।
![dhakapost](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023May/dp-tyre-retrding-05-20230509181528.jpg)
টায়ার রিট্রেড করা দোকানি, গাড়ির মালিক ও চালকের ভাষ্য
দেশের প্রতিটি বাস-ট্রাক টার্মিনালে কম-বেশি টায়ার রিট্রেড করার দোকান আছে। ঢাকায় এসবের প্রধান জায়গা হলো ধোলাইখাল। এর বাইরে সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল এবং তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে সবচেয়ে বেশি টায়ার রিট্রেডিং-এর দোকান আছে।
মহাখালী বাস টার্মিনালে অবস্থিত টায়ার রিট্রেডিং-এর দোকানের মিস্ত্রি নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, রিট্রেডেড টায়ার বেশ টেকসই হয়। নতুন চাকার মতো সার্ভিস দেয় এটি। ক্যাচিং আলাদা কিনতে পাওয়া যায়। একটি ভালো ক্যাচিংয়ের দাম সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এরপর রাবার খরচসহ সবমিলিয়ে অনেক টাকা লাগে। একজোড়া টায়ারে ভালো মানের রিট্রেড করতে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা লাগে। যেখানে নতুন একজোড়া টায়ারের দাম পড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।এটি কপালের ওপর নির্ভর করে। নতুন টায়ারও অনেক সময় ফেটে যায়। রাবার লাগানো টায়ার টিকলে টিকল, না টিকলে নাই। মূল কথা হচ্ছে, যখন টাকা থাকে না তখন এটি ব্যবহার করা হয়। ধরেন, এক সেটে দুটি টায়ার থাকে। এর মধ্যে একটি ক্ষয় হয়েছে, আরেকটি ভালো আছে। তখন ওই ক্ষয় হওয়া টায়ারে রাবার লাগিয়ে আবার ব্যবহার করা হয়। মানে, সেটের একটি টায়ার ভালো, অপরটি রাবার লাগানো (রিট্রেডেড টায়ার)দূরপাল্লা রুটের এক বাসচালক, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
‘এ টায়ার তিন মাস বা তার বেশি সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এটি গাড়ির লোডের ওপর নির্ভর করে।’
আরও পড়ুন >> ঈদযাত্রার ১৪ দিনে ২৪০ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৮৫
তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে শেখ রাসেল নামের এক মিস্ত্রি ঢাকা পোস্টকে বলেন, অল্প দূরত্বে চলাচল করা যানবাহনের ক্ষেত্রে এ টায়ার ব্যবহার করা হয়। দাম কম হওয়ায় মালিকরা এটি ব্যবহারে বেশি আগ্রহ দেখান। এসব টায়ার তিন থেকে ছয় মাস ব্যবহার করা যায়।
দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী একটি বাসের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নতুন ও রিট্রেডেড টায়ার মিশিয়ে ব্যবহার করি। একজোড়া নতুন টায়ারের দাম অনেক। সেখানে রিট্রেডেড টায়ারের দাম কম। এক সেটে দুটি টায়ার থাকলে সেখানে প্রধান টায়ার নতুন এবং সাপোর্টিং টায়ার রিট্রেডেড হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
![dhakapost](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023May/dp-tyre-retrding-06-20230509181625.jpg)
‘দিন দিন জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে আমাদের কোনো উপায় নেই। ঝুঁকি জেনেও এ টায়ার ব্যবহার করতে হয়। তবে, আমরা নিয়মিত টায়ার চেক করি।’রিট্রেডেড টায়ার তো আসলে বিক্রি হয় না, এটি হচ্ছে ফেরি করে দুর্ঘটনা বিক্রি করার মতো অবস্থা! উন্নত বা মধ্যম আয়ের দেশে এ ধরনের টায়ার ব্যবহারের সুযোগ নেই, ব্যবহার করা হয় না। আমরা বাংলাদেশে একদিকে দুর্ঘটনা নিয়ে দুর্ভাবনায় আছি, অন্যদিকে আমরা এ টায়ারগুলো ব্যবহার করছিবাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী
দূরপাল্লার রুটের এক বাসচালক নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ টায়ার ব্যবহারে অত সুবিধা নেই। ধরুন, আমার বাসে দুটি বা একটি টায়ার ক্ষয় হয়ে গেছে, কিন্তু পকেটে টাকা নেই; তখন এটি লাগানো হয়। এক জোড়া নতুন টায়ারের দাম ৭২ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে, রাবার লাগানো টায়ারের দাম পড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
রিট্রেডেড টায়ারে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা কেমন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি কপালের ওপর নির্ভর করে। নতুন টায়ারও অনেক সময় ফেটে যায়। রাবার লাগানো টায়ার টিকলে টিকল, না টিকলে নাই। মূল কথা হচ্ছে, যখন টাকা থাকে না তখন এটি ব্যবহার করা হয়। ধরুন, এক সেটে দুটি টায়ার থাকে। এর মধ্যে একটি ক্ষয় হয়েছে, আরেকটি ভালো আছে। তখন ওই ক্ষয় হওয়া টায়ারে রাবার লাগিয়ে আবার ব্যবহার করা হয়। মানে, সেটের একটি টায়ার ভালো, অপরটি রাবার লাগানো (রিট্রেডেড টায়ার)।’
আরও পড়ুন >> যেটা দিতে পারব না, সেটা কেড়ে নেওয়ারও অধিকার নেই
যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি তো আসলে রিট্রেডেড টায়ার বিক্রি করা নয়, এটি হচ্ছে ফেরি করে দুর্ঘটনা বিক্রি করার মতো অবস্থা! উন্নত বা মধ্যম আয়ের দেশে এ ধরনের টায়ার ব্যবহারের সুযোগ নেই, ব্যবহার করা হয় না। আমরা বাংলাদেশে একদিকে দুর্ঘটনা নিয়ে দুর্ভাবনায় আছি, অন্যদিকে আমরা এ টায়ারগুলো ব্যবহার করছি।
![dhakapost](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023May/dp-tyre-retrding-07-20230509181654.jpg)
‘বাংলাদেশের বাজারে রিট্রেডেড টায়ারের একটি ব্যবস্থা আছে। অর্থাৎ পুরাতন ও মেয়াদোত্তীর্ণ টায়ারগুলো রিট্রেড করে বিক্রি করা হয়। এ বিষয়ে মালিকদের আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত।’কস্ট (খরচ) একটি বিরাট ফ্যাক্টর। এর বাইরে আমাদের দেশের মালিকদের রিস্ক পারসেপশন অনেক দুর্বল। তাদের ধারণা, কিছু হলে চালকের হবে। অন্যদিকে, চালকরা অর্থনৈতিক কারণে এত দুর্বল অবস্থানে আছেন যে তাদের ‘না’ বলার কোনো সুযোগ নেই। চালকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা জানেন টায়ার বিস্ফোরিত হবে। তারপরও তারা গাড়ি চালান। এর মূল কারণ হলো, মালিক জানেন রিট্রেডেড টায়ারের জন্য তিনি নিজে দুর্ঘটনার শিকার হবেন না। হলে চালক বা যাত্রী হবেন। দুর্ঘটনার পর চালক ছাড়া আর কাউকে দায়ী করা হয় না। ফলে আমি বলব, চালকরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকেনঅধ্যাপক ড. এম শামসুল হক
বাসের ক্ষেত্রে রিট্রেডেড টায়ার কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ— জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে ভালো মানের যেসব বাস ও ট্রাক দূরপাল্লার রুটে চলাচল করে, তারা আগে রিট্রেডেড টায়ার ব্যবহার করত। এখন ব্যবহারের পরিমাণ কমেছে। কারণ, তারা বেশি পরিমাণ ওজন ক্যারি করে। ফলে এগুলো বেশি দিন টেকে না। সিটির মধ্যে এখনও যেসব ট্রাক ইট-বালু পরিবহন করে, তারা এটি ব্যবহার করে।
‘গঠনগতভাবে টায়ারগুলো ভেতর থেকে অনেক শক্তিশালী হয়। এগুলো ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে বানানো হয়। নতুন টায়ার বানাতে যে পরিমাণ খরচ হয়, এর ব্যবহারকারীরা সেই খরচ বহন করতে পারেন না। এছাড়া, আমাদের দেশে টায়ারের গুণগত মান যাচাইয়ের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এটি যারা আমদানি করেন, তারা যখন দেখেন যে আমাদের এখানে কোনো সুরক্ষা নেই, তখন তারা যন্ত্রাংশ এনে যে নামে চাওয়া হয় সে নামেই বানিয়ে দেন।’
আরও পড়ুন >> টানা ৩৩ ঘণ্টা বাস চালিয়ে ক্লান্ত ছিলেন চালক
‘আমরা টায়ারের গায়ে লেখা দেখি ১৬পি। মানে ১৬টি স্তরে এটি বানানো হয়েছে। কিন্তু টায়ার যখন ফাটে তখন দেখা যায় ততগুলো স্তর সেখানে নেই। সুতরাং ব্যবহারকারীরা দাম দিলেও তারা ঠকছেন। পৃথিবীর সব দেশের নিয়ম হলো, টায়ার যাচাইয়ের পর গুণগত মান দেখে ছাড়পত্র দেওয়া। টায়ার কেটেও টেস্ট করা যায়, আবার না কেটেও করা যায়। টায়ার কেটে টেস্ট করাই হচ্ছে যথোপযুক্ত। আমাদের এ ধরনের দুর্বলতার সুযোগে সুযোগসন্ধানীরা ভালো মানের টায়ারগুলো নকল করে বাজারে ছাড়ে।’
![dhakapost](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023May/dp-tyre-retrding-09-20230509181727.jpg)
মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, দূরপাল্লার অনেক বাসেই রিট্রেডেড টায়ার লাগানো আছে। দাম কম হওয়ায় মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছেন। বিষয়টি জানালে অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘কস্ট একটি বিরাট ফ্যাক্টর। এর বাইরে আমাদের দেশের মালিকদের রিস্ক পারসেপশন অনেক দুর্বল। তাদের ধারণা কিছু হলে চালকের হবে। অন্যদিকে, চালকরা অর্থনৈতিক কারণে এত দুর্বল অবস্থানে আছেন যে তাদের ‘না’ বলার কোনো সুযোগ নেই।’ইমাদ পরিবহনে রিট্রেডেড টায়ার ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু টায়ারের গুণগত মান ভালো ছিল না। ওই গাড়ির সব টায়ারই ভালো ছিল। কিন্তু যে টায়ারটি ফেটেছিল সেটির গুণগত মান কম ছিল বলে আমার ধারণাঅধ্যাপক ড. এম শামসুল হক
‘চালকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা জানেন টায়ার বিস্ফোরিত হবে। তারপরও তারা গাড়ি চালান। এর মূল কারণ হলো, মালিক জানেন রিট্রেডেড টায়ারের জন্য তিনি নিজে দুর্ঘটনার শিকার হবেন না। হলে চালক বা যাত্রী হবেন। দুর্ঘটনার পর চালক ছাড়া আর কাউকে দায়ী করা হয় না। ফলে আমি বলব, চালকরাই সবচাইতে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।’
আরও পড়ুন >> সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে আর ফেরা হলো না মিমির
‘দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর জন্য গরমকালে দুর্বল ও রাবারাইজড টায়ারেও বাতাসের প্রেশার বেশি পরিমাণে দেওয়া হয়। একে তো গরম বাতাস, তার ওপর গাড়ির প্রেশারে টায়ারের ভেতরের বাতাস আরও গরম হয়। এমন অবস্থায় বড় কোনো ঝাঁকিতে সেই টায়ার ফেটে যেতে পারে। আমাদের দেশে যখনই শুনবেন ব্রিজে এসে রেলিং ভেঙে কোনো গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে; তখন আপনাকে বুঝতে হবে যে টায়ারের ভেতরের বাতাস গরম হয়ে ব্রিজ ও রাস্তার মাঝে যে ফাঁকা স্থান থাকে, সেখানে জোরে ধাক্কা খেয়ে টায়ার ফেটে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ, চালকরা সব ঝাঁকিতে ব্রেক কষতে চান না।’
![dhakapost](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023May/dp-tyre-retrding-04-20230509181844.jpg)
ইমাদ পরিবহনের টায়ার ফাটা প্রসঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এ পরিচালক বলেন, ‘ওই পরিবহনে রিট্রেডেড টায়ার ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু টায়ারের গুণগত মান ভালো ছিল না। ওই গাড়ির সব টায়ারই ভালো ছিল। কিন্তু যে টায়ারটি ফেটেছিল সেটির গুণগত মান কম ছিল বলে আমার ধারণা।’
রিট্রেডেড টায়ার ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ— উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ টায়ার মালিকের জন্য, চালকের জন্য এবং যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে বিএসটিআই-এর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এর বাইরে বিআরটিএ যখন ফিটনেস সনদ দেয়, তখন তাদেরও বিষয়টি দেখা উচিত।’
Leave a Comment